লোহাপুর: মসজিদে ইমামতি করে স্ত্রীর সহ এক ছেলে এবং এক মেয়েকে নিয়ে তার সংসার। তার মেয়ে খাদিজা বেগম সেও আল-আমিন মিশনের দশম শ্রেণীর ছাত্রী। তার মাত্র দুই বিঘা জমি। আবার ছেলে-মেয়ের পড়াশোনার জন্য খরচ টানতে অনেক দিন আগেই বন্ধক রেখেছেন। মসজিদ থেকে ইমাম ভাতা ছাড়া সরকারি কোনো সুযোগ পাননি। হবু চিকিৎসক আব্দুল আউয়াল প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর ছেলের ডাক্তারি পড়ার খরচ কি ভাবে যোগাড় করবেন চিন্তায় ভুগছেন তার বাবা কবিরুল ইসলাম। মসজিদের ইমামের ছেলে আব্দুল আওয়াল হতে চলেছেন চিকিৎসক। প্রতিবেশী রনহা গ্রামের জুম্মা মসজিদে ইমামতি করেন। সেখানে মাস মাইনা পান ৭ হাজার, সেই সঙ্গে তিন হাজার টাকা পান রাজ্য সরকারের দেওয়া ইমাম ভাতা। সাকুল্যে দশ হাজার টাকা আয়ে সংসার চলে। ছেলের পড়াশোনা।
আব্দুল আওয়ালের বাড়ি নলহাটি ২ নম্বর ব্লকের লোহাপুর গ্রাম। বাবা কবিরুল ইসলাম রনহা জুম্মা মসজিদের ইমাম। মা নুরজামা বিবি গৃহবধূ। নিট ২০২৪ ডাক্তারি প্রবেশিকা পরীক্ষায় সে ৭২০ নম্বরের মধ্যে ৬৯০ নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। সর্বভারতীয় স্তরে তার রাঙ্ক ৪ হাজার ৩৫৯ এবং ২ হাজার ১৫০ তার ক্যাটাগরি রাঙ্ক। আব্দুল আওয়াল মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিকে আশানুরূপ ফলাফল না হলেও অদম্য জেদ ও পরিশ্রমের জোরে চিকিৎসক হতে চলেছে আব্দুল আউয়াল। লোহাপুর গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তার পড়াশোনা। পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তি হয় লোহাপুর এম আর এম হাই স্কুলে। সেখান থেকে আল-আমিন মিশনের প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বীরভূমের নানুরের পাপুড়ি ক্যাম্পাসে ভর্তি হয় সে। সেখান থেকে টানা পাঁচ বছর পড়াশোনা। করোনা কালে ২০২১ এর মাধ্যমিকে তার প্রাপ্ত নম্বর ৬৬১ তে ৯৪ শতাংশ। একই ভাবে আল আমিন মিশনের বেলডাঙ্গা শাখায় ২০২৩ এ উচ্চমাধ্যমিকে বিজ্ঞান বিভাগের ৮৮ শতাংশ তার প্রাপ্ত নম্বর। প্রবেশিকা পরীক্ষার জন্য আল আমিন মিশন মেটিয়াবুরুজের পাঁচুর ক্যাম্পাসে কঠোর পরিশ্রমে শুরু হয় প্রবেশিকা পরীক্ষার প্রস্তুতি। মানুষের সেবা করে মানুষের পাশে থাকতে চায় সে । এই খুশির খবরে গর্বিত তার পরিবার। গর্ব বোধ করছেন এলাকাবাসী। রবিবার বিকেলে আব্দুল আওয়ালকে শুভেচ্ছা জানাতে আসেন জামাতে ইসলামী হিন্দের বীরভূম জেলা সংগঠনের নেতৃত্বরা।