চিন্ময় দাসকে নিয়ে দ্বিধা-বিভক্ত বাংলাদেশের হিন্দুরা

4 Min Read

ঢাকা: স্বঘোষিত হিন্দু নেতা চিন্ময় দাসকে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে গ্রেফতারের পর জলঘোলা করার চেষ্টা করছে রাজনীতির কারবারিরা। একশ্রেণির মিডিয়া ও রাজনীতিক ঘোলা জলে মাছ ধরতে চাইছে। কিন্তু এই চিন্ময়কে নিয়ে অভিযোগ তুলেছেন খোদ বাংলাদেশি হিন্দুদেরই বৃহত্তর অংশ। তার ঘটনার কথা শুনলে মনে পড়বে গুরমিত রাম-রহিম বাবার কথা। সকল ধর্ম-বর্ণে শিশু বলাৎকার বা ধর্ষণ হল নিষিদ্ধ। তারপরও ইসকন নেতা চিন্ময় প্রায় সময় শিশুদের সঙ্গে বলাৎকার ও নারীদের সঙ্গে যৌন কাজে লিপ্ত থাকেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে তাকে ইসকন থেকে বিভিন্ন সময় সতর্কও করা হয়। এতে বলা হয়- কোনো শিশু বা ১৮’র নিচে কোনো মেয়েদের সঙ্গে তিনি সংস্পর্শে আসতে পারবেন না। এছাড়া নারীদের সঙ্গে রাত্রীযাপন ও দিনের বেলায় সংস্পর্শে আসতে পারবেন না।


এ নিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মাঝে চলছে তুমুল বিতর্ক। সনাতন ধর্মে তার দুশ্চরিত্র নিয়ে দেখা দিয়েছে বিভিন্ন বিভ্রান্ত ধারণা। তারা বলছেন, তার সঙ্গে না থাকাই অনেক ভালো। কারণ তারা আরও বলছেন, আমাদের ধর্মে অনেক শিক্ষিত ও মার্জিত লোক আছে যারা বিভিন্ন সময় দেশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। এমনকি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময়ও আমরা দেশের জন্য অনেক আত্মত্যাগ করেছি। এছাড়া এখনও দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আমাদের অবদান রয়েছে। কাজেই কিছু দুশ্চরিত্র লোকের সঙ্গে থাকলে নিচের সম্মান ও চরিত্র দুইটাই নষ্ট হয় বলে তারা জানান।

সুভাশিষ কর্মকার নামে একজন লিখেছেন, আমরা কোনো বাটপার ও সন্ত্রাসী চিন্ময়ের সঙ্গে কোনো সময় ছিলাম না, এখনও নেই। আমরা চাই ইসকন থেকে তাকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হোক। শিশির নামে একজন লিখেছেন, চিন্ময়ের মতো লোক দেশ ও জাতির জন্য কোনো সময় ভালো কিছু বয়ে আনবে না। আমরা চাই তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক। তার কারণে আমাদের হিন্দু ধর্ম ভাই-বোনদের অসম্মান।

চট্টগ্রামের হাটহাজারীর পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। চট্টগ্রামের হাজারি গলিতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির অপচেষ্টার অংশ হিসাবে সহিংসতায় সেনা ও পুলিশ বাহিনীর ওপর ভয়ঙ্কর এসিড হামলার নেপথ্যে তার ভূমিকার অভিযোগও রয়েছে। এর আগে চট্টগ্রামের নিউমার্কেট চত্বরে মুক্তমঞ্চে ছাত্র-জনতার উড়ানো জাতীয় পতাকার ওপর গেরুয়া পতাকা উড়িয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অবমাননাপূর্বক দেশের স্বাধীনতা, সাবভৌমত্ব ও জাতীয় অখণ্ডতাকে অস্বীকার করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। হাটহাজারীতে জমি দখল, মন্দিরের অভ্যন্তরে অনাথ শিশুদের সাথে অবাধ যৌনাচার ও যৌন হয়রানির অভিযোগও রয়েছে ইসকনের এ বিতর্কিত নেতার বিরুদ্ধে।


ছাত্র-জনতার নজিরবিহীন এক গণঅভ্যুত্থানে বিগত ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর গঠিত অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারকে অস্থিতিশীল করা, সেইসঙ্গে দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধানোর যে কয়টি অপচেষ্টা হয়েছে তার পেছনে এ ইসকন নেতার সরাসরি ইন্ধন রয়েছে বলে তথ্য আছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছে। তার আটক হওয়ার খবরে চট্টগ্রামসহ সারাদেশে দেশপ্রেমিক ছাত্র-জনতার মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে। তাকে বিচারের মুখোমুখি করার জন্য সরব হচ্ছে বিভিন্ন মহলে।

চট্টগ্রামে ইসকনের নামে নানা অপকর্মে জড়িত এই চিন্ময় কৃষ্ণ দাস। একসময় তিনি ইসকন প্রবর্তক মন্দিরের বিভিন্ন দায়িত্বে ছিলেন। সেখানে অনাথ কয়েকজন শিশুকে জোরপূর্বক বলাৎকারের অভিযোগ উঠে তার বিরুদ্ধে। তার যৌন লালসার শিকার এসব শিশুদের দেওয়া বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। মন্দিরের সাধু থেকে শুরু করে অভিভাবকরাও তার এসব অনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন। একপর্যায়ে তাকে ওই মন্দির থেকে বের করে দেওয়া হয় বলেও জানা গেছে। শেখ হাসিনার শাসনামলে বিতর্কিত শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের সহযোগী ছিলেন এই ইসকন নেতা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Sign up for our Newsletter