বাংলায় যারা আট দফায় ভোট করায় তারা ‘এক দেশ, এক ভোট’ করবে কীভাবে?

6 Min Read

কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা এক দেশ, এক ভোট প্রস্তাবে সায় দিয়েছে। এবার তা বিল আকারে পেশ হবে সংসদে। তার আগে এই বিল নিয়ে সরব হলেন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় । সোমবার সংসদে ঢোকার মুখে ‘এক দেশ, এক ভোট’ বিল নিয়ে কেন্দ্রের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘বাংলায় ২০২১ সালে বিধানসভা ভোট হয়েছিল ৮ দফায়। ২০২৪ সালের লোকসভা ভোট হয়েছিল ৭ দফায়। দেড় মাস আগে ছোট্ট ঝাড়খণ্ডে বিধানসভা ভোট হয়েছে দু’দফায়।

যে সরকার ৭-৮ দফায় বিধানসভা, লোকসভা ভোট করে, তারা এক দফায় ভোট করবে কী ভাবে? তাঁর খোঁচা, যারা বাংলায় ৮ দফায় ভোট করায়, তারা নাকি দেশে এক দফায় নির্বাচন করাবে, ব্যাপারটাই হাস্যকর। আসলে ভোটপ্রক্রিয়ায় বদল এনে সংবিধান বদলে দিতে চাইছে বিজেপি।

অভিষেকের কথায়, ‘সরকার তো পাহারাদার। পাহারাদার চাইছে ২৫ দিনের পরিবর্তে ২ দিন ডিউটি করতে! এটা হলে সরকারের তো আর কোনও দায়-দায়িত্বই থাকবে না। মোদি সরকার সেটাই করতে চাইছে। ওরা মানুষের ভোটদানের মৌলিক অধিকার কেড়ে নিতে চাইছে। তবে আমরা যতদিন আছি, এসব হতে দেব না। ওরা হাজার চেষ্টা করুক। ওরা তো সংবিধানটাকেই বদলে দিতে চাইছে। এরপরে তো বলবে, ওয়ান ন্যাশন ওয়ান পলিটিক্যাল পার্টি! ওয়ান ন্যাশন ওয়ান লিডার! এই বিল জনগণের অধিকার হরণ করবে। ভোট প্রক্রিয়ায় বদল এনে সংবিধান বদল করতে চাইছে বিজেপি। তিনি বলেন, যতদিন বিরোধী দল থাকবে, আমরা এই বিল পাস হতে দেব না।

কেন্দ্রের ‘বৈষম্যমূলক আচরণ’ বোঝাতে ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন অভিষেক। তিনি বলেন, ২০২১ বাংলার সঙ্গে কেরল ও অসমে নির্বাচন হয়েছিল। তখন কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যেও বাংলায় আট দফায় ভোট করিয়েছিল। যারা একটা রাজ্যে আট দফায় নির্বাচন করায় তারা সারা দেশে এক দফায় নির্বাচন করাবে? এটা হাস্যকর।

এমনকী ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে তাঁর ডায়মন্ডহারবার কেন্দ্রে তিন দফায় ভোটের প্রসঙ্গ মনে করিয়ে অভিষেক বলেন, ‘ভাবুন, একটা লোকসভা কেন্দ্র, সেখানেও তিন দফায় ভোট!’ অভিষেকের অভিযোগ, এই ‘এক দেশ, এক ভোট’ বিল এনে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে কেন্দ্র। পঞ্চায়েত, পুরসভা, বিধানসভা, লোকসভা—মানুষ বছরের বিভিন্ন সময়ে ভোটদান করতে পারলে সরকার চাপে থাকবে। মানুষের সেই অধিকার কেড়ে নিতে চাইছে মোদি সরকার।

ইন্ডিয়া জোট সম্পর্কেও এদিন নিজের মতামত দিয়েছেন অভিষেক। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই ইন্ডিয়া জোটের নেত্রী করা উচিত কিনা সেই প্রশ্ন উঠতেই অভিষেক বলেন, ইন্ডিয়া জোট এই বিষয়ে একসঙ্গে বসে আলোচনা করবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়  এই জোটের সব চেয়ে প্রবীণ নেত্রী। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবেও এটি মমতার তৃতীয় মেয়াদ। শুধু তাই নয়, এর আগে তিনি কেন্দ্রীয়মন্ত্রী ছিলেন।

তাই এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হওয়া উচিত। কোনও পক্ষকে ছোট করা উচিত নয়। এই প্রসঙ্গে তাঁর মন্তব্য, ‘কোনও দলকে ছোট করে দেখা উচিত নয়। তৃণমূলই একমাত্র দল, যারা কংগ্রেস এবং বিজেপিকে হারিয়েছে। আঞ্চলিক দলগুলিকে হেয় করা ভুল। আর এই ভুলটি কংগ্রেস এবং বিজেপি উভয়ই করে থাকে। জনগণের ভোটে আমরা এখানে এসেছি। সংখ্যাটা ২৯ হলেও কখনও মানুষকে হেয় করা উচিত নয়। তবে রাজ্যে (বাংলায়) বিজেপি সাংসদ সংখ্যা কমিয়েছে তৃণমূল (১৮ থেকে কমে ১২ হয়েছে)। বিজেপির বিরুদ্ধে তৃণমূলের স্ট্রাইক-রেট যথেষ্ট ভাল।’

ইভিএমে কারচুপি নিয়ে যে অভিযোগ উঠছে তা নিয়েও মুখ খুলেছেন অভিষেক। তৃণমূল সাংসদের বক্তব্য, যদি ভোট শুরুর আগে এবং ভোটগণনার সময় ঠিকভাবে ইভিএম খতিয়ে দেখা হয়, তাহলে তাতে কারচুপির কোনও সুযোগ আছে বলে মনে করেন না। আর তারপরও যদি কোনও প্রমাণ থাকে, তা নির্বাচনের কমিশনের কাছে পেশ করার বা আন্দোলনে নামার পরামর্শ দিয়েছেন অভিষেক।

যদিও সোমবার অভিষেক যে সেই মন্তব্য করেছেন, সেটা মমতার অতীতের অভিযোগের প্রেক্ষিতে নয়। বরং মহারাষ্ট্র বিধানসভা নির্বাচনে ইভিএম কারচুপির যে অভিযোগ তুলেছে কংগ্রেস-সহ একাধিক বিরোধী দল, সেটার প্রেক্ষিতেই অভিষেক বলেন, ‘আমার মনে হয়…এটা আমার ব্যক্তিগত মত। যাঁরা ইভিএম নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন, তাঁদের কাছে যদি এমন কিছু তথ্য থাকে, সেটাকে নির্বাচন কমিশনকে গিয়ে দেখানো উচিত। (বলা উচিত যে) আমাদের কাছে এই ভিডিয়ো আছে।

‘আমি এতদিন ধরে মাঠে নেমে ভোট করাই, আমার মনে হয়, ইভিএমে র্যান্ডমাইজেশনের সময় আপনি যদি ঠিকভাবে কাজ করেন আর মক পোলিংয়ে বুথকর্মীরা যদি ঠিকভাবে কাজ করেন এবং গণনার সময় যে ১৭সি ফর্ম থাকে, সেটার সঙ্গে ব্যালট ইউনিট ও কন্ট্রোল ইউনিট যদি ঠিকভাবে মিলিয়ে দেখা যায়, তাহলে আমার মনে হয় না যে এই অভিযোগ কোনও সারবত্তা আছে।

তারপরও কারও যদি মনে হয় যে ইভিএমে কারচুপি করা সম্ভব, ইভিএম হ্যাক করা সম্ভব, তাহলে আমার মনে হয় যে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে দেখা করা উচিত নির্বাচন কমিশনের। তারপর দেখানো উচিত যে এই প্রযুক্তি বা সফটওয়্যার বা ম্যালওয়্যার দিয়ে ইভিএম হ্যাক করা যায়। যদি সেটাও করতে না পারেন, তাহলে রাস্তায় নেমে আন্দোলন করুন। শুধু কয়েকটা মন্তব্য করে কোনও লাভ হবে না।’

ভারত-বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে কী কী বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, তা সংসদে পেশ করার দাবি জানান অভিষেক। তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তের পাশে আছে বাংলার সরকার। কিন্তু কোনও মন্ত্রী দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় গেলে তাদের উচিত সংসদে এসে সদস্যদের সে বিষয়ে আপডেট করা। এটা সংসদীয় রাজনীতির একটি অংশ। এটি একটি ন্যূনতম সৌজন্য, যা প্রতিটি সাংসদ সরকারের থেকে প্রত্যাশা করে।

আর তাই বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক আলোচনার বিষয় সংসদে প্রকাশ করা উচিত। যদি সরকার তা করতে না চায়, তাহলে বুঝতে হবে ১৪০ কোটি ভারতীয়কে অন্ধকারে রাখতে চাইছে সরকার। এটা আন্তর্জাতিক বিষয়। এ ব্যাপারে নয়াদিল্লি তথা বিদেশ মন্ত্রক যে অবস্থান নেবে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় সেটাই তৃণমূলের অবস্থান হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Sign up for our Newsletter