কয়েকটা উপহারের জন্য সাংসদ দেশের সুরক্ষার কথা ভাবেননি। ‘সংসদে টাকা নিয়ে প্রশ্ন’কাণ্ডে তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রকে এ ভাবেই আক্রমণ করলেন বিজেপি সাংসদ দিলীপ ঘোষ। তিনি তৃণমূল সাংসদের জীবনচর্যা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তালিকা দেওয়ার ভঙ্গিতে দাবি করলেন, মহুয়া কী কী উপহার তাঁর প্রাক্তন বান্ধবের কাছ থেকে নিয়েছেন। যার প্রেক্ষিতে দিলীপকে ‘নারীবিদ্বেষী’ বলে কটাক্ষ করল তৃণমূল।
রবিবার দুর্গাপুরে একটি পথসভা থেকে তৃণমূল সাংসদ মহুয়া এবং তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে বলতে শুরু করেন দিলীপ। তিনি বলেন, ‘‘মহুয়া সংসদে ইংরেজিতে গালাগালি করছেন।’’ এর পর সাংসদের বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে প্রশ্ন করার অভিযোগ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। বস্তুত, লোকপালের নির্দেশ মেনে, মহুয়ার বিরুদ্ধে ওঠা টাকার বিনিময়ে প্রশ্নের অভিযোগ নিয়ে প্রাথমিক অনুসন্ধান শুরু করে দিয়েছে সিবিআই। এ নিয়ে দুর্গাপুরে গোপালমাঠে দিলীপের কটাক্ষ, ‘‘উনি উত্তর না দিয়ে সবাইকে গালাগালি করছেন। (কিন্তু) সব প্রমাণ বেরোতে শুরু হয়েছে। দোষী প্রমাণিত হলে তো শাস্তি হওয়া দরকার।’’ এখানেই থামেননি দিলীপ। মহুয়া প্রসঙ্গে তাঁর মন্তব্য, ‘‘উনি (তৃণমূল সাংসদ) বলেছেন টাকা নিইনি। গিফ্ট নিয়েছি। লিপস্টিক, পাউডার-স্নো… চকচকে চেহারা… গোরে গোরে মুখরে পে কালা কালা চশমা!’’
সভায় উপস্থিত কর্মী এবং সমর্থকদের উদ্দেশ্য করে দিলীপের সংযোজন, ‘‘ছবি দেখুন আপনারা। সেই চশমার দাম জানেন? দু’লাখ টাকার গগলস! ভ্যানিটি ব্যাগের দাম এক লাখ টাকা! ঘড়ির দাম তিন লাখ! শুনেছেন কোনও দিন? সব গিফ্ট নিয়েছেন। দিল্লিতে যে কোয়ার্টারে থাকেন, তার আধুনিকীকরণ হয়েছে কোটি কোটি টাকায়। এর বিনিময়ে দেশের সুরক্ষা বেচে দিয়েছেন বিদেশের মাটিতে। তাঁর পাপের ঘড়া ভরে গিয়েছে। সিবিআই তদন্ত হচ্ছে। মেম্বারশিপও (সংসদ পদ) যেতে পারে। এই ধরনের জিনিস মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৈরি করে পাঠিয়েছেন বাঙালির নাক-কান কাটার জন্য।’’
প্রসঙ্গত, সিবিআই যে মামলাটির তদন্তভার হাতে নিয়েছে বলে সংবাদমাধ্যমের একাংশ দাবি করছে, তা দায়ের করেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তথা মহুয়ার প্রাক্তন বান্ধব জয় অনন্ত দেহাদ্রাই। তাঁর অভিযোগ, লোকসভায় প্রশ্ন করার বিনিময়ে মহুয়া শিল্পপতি দর্শন হীরানন্দানির কাছে থেকে ঘুষবাবদ নগদ এবং উপহার নিয়েছিলেন। দেহাদ্রাই এই বিষয়টি বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবেকে জানান। ওই বিজেপি সাংসদ সেই অভিযোগ সম্বলিত চিঠি পাঠিয়ে দেন লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লার কাছে। বিড়লা বিষয়টি ফয়সালার ভার দেন লোকসভার এথিক্স কমিটিকে। দেহাদ্রাই লোকপালের কাছেও তাঁর অভিযোগ নথিভুক্ত করিয়েছেন। যদিও এই পুরো ঘটনাকে নাটক বলে কটাক্ষ করেছে তৃণমূল। মহুয়ার পাশে দাঁড়িয়েছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। দিলীপের এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে তৃণমূল সাংসদ শান্তনু সেন বলেন, ‘‘দিলীপ ঘোষ নারীবিদ্বেষী। বিজেপি দলটাই মহিলাদের সম্মান করে না। তাদের কাছ থেকে এমন মন্তব্যই স্বাভাবিক।’’