প্রতি বছর আরাফাতের ময়দানে হাজির হন বিশ্বের নানা প্রান্তের মানুষ। হজের আনুষ্ঠানিকতা শেষে সেখানে দেওয়া হয় পশু কোরবানি। ২০ লাখেরও বেশি মানুষ হজ পালন শেষে কোরবানি দিয়ে থাকেন।
এ লাখো পশুর বিপুল মাংস নিজেরা আর কতটাই বা ভোগ করেন। বিদেশে দেওয়ার মতো আত্মীয়স্বজনও নেই। দুস্থ মিসকিনও নেই বললেই চলে।
তাহলে এই বিপুল মাংসের কী হয় সেখানে? একটা সময় ছিল হাজিদের অনেকেই কোরবানির মাংসগুলো শুকিয়ে সংরক্ষণ করতেন। কেউ আবার নিরুপায় হয়ে মাংস রাস্তায় ফেলে দিতেন। অনেকে প্রক্রিয়াজাতকরণের বিড়ম্বনায় মাংস মাটিতেই পুঁতে ফেলতেন, যা শুধু অপচয়ই না, পরিবেশেরও ক্ষতি করত।
১৯৮৩ সালে প্রথম মক্কা মিনা ও আশপাশের এলাকার পরিবেশ রক্ষার্থে কোরবানির মাংস কাজে লাগানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। যে উদ্যোগে শুধু পরিবেশই রক্ষা হয়নি মুসলিম বিশ্বের ২৭ দেশের তিন কোটিরও বেশি মানুষের খাবারের সংস্থান করা গেছে।
ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক বা আইডিবি প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায়। প্রকল্পের অংশ হিসেবে ২৫ বছর আগে ওয়াইসেমে একটি স্বয়ংক্রিয় কসাইখানা প্রতিষ্ঠা করা হয়।
পরিচ্ছন্নতাকর্মী, কসাই ও প্রশাসকসহ ৪০ হাজারের বেশি কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয় এখানে। হজের সময় জবাই করা লাখ লাখ ভেড়া, গরু ও উটের মাংস এখানে প্রসেস করা হয়।
শুধু মাংসই নয়, দিনে ৫০০ টন ময়লা প্রসেস করতে পারে এমন প্ল্যান্টও সেখানে স্থাপন করা হয়। এই প্ল্যান্ট ময়লাগুলোকে সারে রূপান্তরিত করে।
কোরবানির মাংসও নিয়ম মেনে বণ্টন করা হয় এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। পাশাপাশি মসজিদুল হারামের আশপাশে দরিদ্রদের মধ্যে মাংস বিতরণ শুরু হয়। মুসলিম দেশগুলোতে সেই মাংস পাঠানো হয় মহরম মাসের প্রথম দিন। ২৫০টি দাতব্য সংস্থার মাধ্যমে সৌদি আরবের মধ্যেও মাংস বিতরণ করা হয়।
প্রকল্পটি মোট ১০টি সরকারি সংস্থা দ্বারা পর্যবেক্ষণ করা হয়। হাজিরা চার উপায়ে পশু কোরবানি দিয়ে থাকেন। তবে হাজিদের বড় একটি অংশ আইডিবির ওপর কোরবানির দায়িত্ব ছেড়ে দেন। এতে সময় ও ঝঞ্ঝাট থেকে বাঁচা যায়, আবার প্রতারিত হওয়ার শঙ্কাও থাকে না।
কোরবানির জন্য একজন হাজিকে ৮০০ রিয়েলের মতো জমা দিতে হয়। পশুর দাম, কসাই খানার খরচ ,মাংস সংরক্ষণ ও দেশে দেশে গরিব মুসলিমদের মধ্যে মাংস বিতরণের খরচও এর মধ্যে সামিল থাকে। আইডিবির সেই প্রকল্পের অংস হিসেবে প্রতি বছর বাংলাদেশেও আসে দুম্বার মাংস। সেই মাংস দরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করা হয়।
এরই মধ্যে প্রকল্পটি বিশ্বব্যাপী বিপুলসংখ্যক দরিদ্র মানুষের খাদ্যের জোগান দিচ্ছে। এখন বিশ্বের প্রায় ১০ কোটি ঘরে এই মাংস বিতরণ করা হয়।