Bardhaman
Bardhaman: স্যাঁতস্যাঁতে মেঝেয় শুয়ে বৃদ্ধা, আর তাঁরই ঘর ‘দখল’ করে পার্টি অফিস ‘বানিয়েছে’ তৃণমূল

3 Min Read

ছোট একটা ঘর। সেখানেই ডাঁই করে রাখা প্রয়োজনীয় যাবতীয় জিনিস। আর মাটিত বিছানা। সেই বিছানায় শুয়ে রয়েছেন বছর পঁয়ষট্টির বৃদ্ধা। মুখে উপরে উড়ছে মাছি। অসহায় অবস্থায় দীর্ঘদিন ধরে এইভাবেই দিন কাটাচ্ছেন তিনি। কিন্তু কেন? অভিযোগ, বৃদ্ধার ঘর দখল করে তৃণমূল পার্টি অফিস তৈরি করা হয়েছে। মাসে-মাসে ভাড়া দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেটাও বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ। ঘর দখলমুক্ত করার প্রচেষ্টায় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানিয়ে মেলেনি সুরাহা। ঘর হারিয়ে অসহায় বৃদ্ধা এখন কী করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না

পূর্ব বর্ধমানের বৈকুন্ঠপুর ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের হ্যাচারি রোডের বাসিন্দা পুস্প চক্রবর্তী (৬৫)। বৃদ্ধার দাবি, ২০১৯ সালে তাঁর বাড়ি ভাড়া দিয়ে তৈরি হয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেসের কার্যালয়। অভিযোগ, সেই সময় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন পঞ্চায়েত সদস্যা মিতা দাস। পরপর দু’বছর নিয়মিত ভাড়াও পেয়েছেন পুস্প। তবে অভিযোগ, ইদানিংকালে এরপর থেকে আর ঘরের জন্য কোনও ভাড়া দেওয়া হত না। এককথায় জবর দখল করে রাখা হয়েছে তার ঘরটি। বর্তমানে তাঁর শারীরিক অবস্থা খারাপ থাকার জন্য তিনি শয্যাশায়ী অবস্থায় রয়েছেন।

পুস্প চক্রবর্তী নিজের বাড়িতে একাই থাকেন। তাঁর বোন মমতা দেবী মাঝে মধ্যে এসে তাঁর দেখাশোনা করেন। বোনের বাড়ি বুদবুদ এলাকায়। ঘর ভাড়া দেওবার প্রথম দুই বছর ভাড়া পেলেও তারপর থেকে ভাড়া না পাওয়ায় চরম আর্থিক সংকটের মধ্যে রয়েছেন তিনি।

এনিয়ে সদস্যা মিতা দাসকে একাধিকবার জানিয়েছেন বলেও দাবি পুস্পা দেবীর বোনের। বারবার মিতা দাসের কাছে দরবার করা হয়েছে বাড়ি ভাড়ার জন্য, কিন্তু টাকা চাইলেই মিলছে হুমকি। মিতা দেবীর অনুগামীরা প্রায়শই হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ।

অসহায় হয়ে পুস্প দেবী গোটা বিষয়টি জানিয়ে বর্ধমান দুই ব্লক বিডিও, পঞ্চায়েত সমিতি, থানা ও পঞ্চায়েত অফিসে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন। কিন্তু সুরাহা হয়নি। পুস্প চক্রবর্তীর বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল বিছানায় শয্যাশায়ী অবস্থায় রয়েছেন তিনি। কথা বলার পর্যন্ত অবস্থা নেই তাঁর। বোন তাঁর চিকিৎসা করাচ্ছেন। এমত অবস্থায় ঘর ফেরতের আর্জি জানাচ্ছেন বোন মমতা দেবীও। উল্লেখ্য, পুস্প দেবীর বাড়িটি ২০১৫-১৬ বর্ষে ইন্দিরা আবাস যোজনার মাধ্যমে তৈরি হয়েছিল।
বিষয়টি নিয়ে বৈকন্ঠপুর ২ পঞ্চায়েতের সদস্যা মিতা দাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান,”২০১৯ সাল থেকে আমি সঠিক সময়ে ভাড়া দিয়ে আসছি। এটা একটা দলীয় কার্যালয়। এভাবে দলীয় কার্যালয় বন্ধ করা যাবে না।” মিতা দেবীর কথায়,”একটা রুলিং পার্টির অফিস যেখানে একজন সদস্য বসেন,বলেও কিছু হবে না।” পাশাপাশি তিনি বলেন, “তাঁর বিরুদ্ধে চক্রান্ত করা হচ্ছে।”

তৃণমূল কংগ্রেসের বৈকন্ঠপুর ২ নং অঞ্চল সভাপতি অনুপম ঘোষ বলেন, “বিষয়টি শুনেছি দলীয় উচ্চ নেতৃত্বকে জানানো হয়েছে। এভাবে কারো ঘর জোরপূর্বক দখল করে রাখা অন্যায়। দল নিশ্চয় ব্যবস্থা নেবে।” রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাস বলেন,”অভিযোগ যদি সত্যি হয় তাহলে দল যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। তৃণমূল কারও সঙ্গে অন্যায় হতে দেবে না।”

বিষয়টি নিয়ে টিপ্পনী কাটতে ছাড়েনি বিজেপি। বিজেপি জেলা সভাপতি অভিজিৎ তা বলেন, “এই ধরনের ঘটনা প্রত্যেকটা জায়গায় ঘটছে। জোর করে জমি,বাড়ি দখল করা তৃণমূলের কালচার। নামেই মা মাটি মানুষের সরকার,আসলে এটা দখল করা সরকার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Sign up for our Newsletter